চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণফোনের রাজস্ব অর্জন সাত হাজার ৭৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত বছর একই সময়ের তুলনায় এই রাজস্ব বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১১ লাখ ৩৯ হাজার নতুন গ্রাহক গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছেন। যার ফলে বছরের প্রথমার্ধ শেষে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১৩ লাখ।গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ বা চার কোটি ৬১ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করেন। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) গ্রামীণফোন তাদের এই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক উচ্চতর এআরপিইউ, শক্তিশালী বাজার কার্যক্রম এবং নেটওয়ার্কে কৌশলগত বিনিয়োগের কারণে রাজস্ব ও ইবিআইটিডিএ উভয় ক্ষেত্রেই টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি এবং গঠনমূলক সংলাপ ও আলোচনার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে।পাশাপশি, বাহ্যিক বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য অভিজ্ঞতার উন্নয়নে নিজেদের মূল সেবাগুলোকে আরো শক্তিশালী করেছে।’তিনি আরো বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও স্পেকট্রাম স্থাপনে গুরুত্বারোপ করে ডিজিটাল-কেন্দ্রিক উদ্ভাবন ও সেবার মাধ্যমে আমরা আমাদের গ্রাহকদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করেছি। এ কৌশল একটি ভবিষ্যৎ উপযোগী ডেটা নেটওয়ার্ক তৈরির ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে, গ্রাহকদের সেবা প্রদানে আমাদের আরো সক্ষম করে তুলেছে এবং দেশের ১ নম্বর নেটওয়ার্ক হিসেবে আমাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।’গ্রামীণফোনের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে আমরা ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিক ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ করেছি।
ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি আমাদের সামগ্রিক পারফরমেন্সে ভূমিকা রেখছে এবং আমরা দুই সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পেরেছি (বছরপ্রতি ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং প্রান্তিক প্রতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ)। ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল উভয় চ্যানেলের মাধ্যমেই গ্রামীণফোন পুরো প্রান্তিক জুড়ে আকর্ষণীয় বান্ডল প্যাক নিয়ে এসেছে; এর ফলে আগের প্রান্তিকের তুলনায় বান্ডল রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।’তিনি আরো বলেন, ‘গ্রামীণফোন ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইবিআইটিডিএ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিগুণ; পাশাপাশি, ৬১ দশমিক ১ শতাংশ শক্তিশালী ইবিআইটিডিএ মার্জিন বজায় রেখেছে। ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন নিয়ে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে কর পরবর্তী মোট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১,৯৭৩.৫ কোটি টাকা। এ প্রান্তিকে, গ্রামীণফোন লিমিটেড এবং বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ট্যাক্স) ২০০৭-২০০৮ থেকে ২০১৯-২০২০ পর্যন্ত মূল্যায়িত বছরের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আয়কর বিরোধ নিষ্পত্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।এছাড়াও, আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অধিকার সংরক্ষণ সাপেক্ষে গ্রামীণফোন ২ জি লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত ভ্যাট ও তরঙ্গ ফি মামলার লিখিত রায় অনুসারে বিটিআরসিকে অর্থ পরিশোধ করেছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও ১,৭৬৯ কোটি টাকা অর্থ পরিশোধ নগদ অর্থের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের অবস্থানে চাপ সৃষ্টি করেছে; কেননা, নিয়মিত পেমেন্ট পরিশোধের বাইরে এ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। নিষ্পত্তি ও বিটিআরসি’র সঙ্গে ধারাবাহিক গঠনমূলক আলোচনা ও সংলাপের অনিশ্চিত ফলাফলের কারণে গ্রামীণফোন অন্তর্বতী কোনো লভ্যাংশ প্রস্তাব করছে না।’তিনি আরো বলেন, ‘বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গত বছরের প্রথমার্ধে ৭৩ শতাংশের তুলনায় ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে গ্রামীণফোন কর, ভ্যাট, ডিউটি, লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ ফি প্রভৃতি বাবদ ৭,০৩০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের মোট রাজস্বের ৯১ শতাংশ। ডিজিটাল জীবনকে সক্ষম করার জন্য এবং এর ফলে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে, গ্রামীণফোন প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাবে।’