দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতের একক বাজার হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমেছে রপ্তানি আয়।
একইসাথে এই অঞ্চল থেকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রবাসী আয় কমে চতুর্থ স্থানে নেমেছে। রপ্তানি-প্রবাসী আয় ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা আমদানি পণ্যের হার আগের তুলনায় কয়েকগুণ কমেছে। পাশাপাশি দেশটি থেকে বৈদেশিক অনুদান এবং ঋণ পাওয়ার প্রবণতা থেকেও পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেশওয়ারি রপ্তানির বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমেছে। এ সময় দেশটিতে মোট ২৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এই চিত্রের বিপরীতে কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। অপ্রচলিত বাজারেও রপ্তানি বেড়েছে এ সময়। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো অপ্রচলিত বাজারে গত চার মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশের মতো। রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। দুই বছর আগে মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ২২ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অক্টোবর পর্যন্ত এ হার ১৮ শতাংশের কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।
রেমিট্যান্স প্রেরণে পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল শীর্ষে। আলোচ্য সময়ে শীর্ষ অবস্থান থেকে নেমে গেছে চতুর্থ অবস্থানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা মোট রেমিট্যান্সের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং মোট রেমিট্যান্স আসার মধ্যে অবস্থান চতুর্থ। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। ওই সময়ে যা মোট রেমিট্যান্সের ১৭ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। ওই সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বরে এসেছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ৮৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, এপ্রিল-জুনে ৭২ কোটি ৮ লাখ ডলার ও জুলাই-সেপ্টেম্বরে এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার।
প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতি প্রান্তিকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছে।
আমদানিতে নেই সুখবর
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে গত বছরের এপ্রিল থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে ওইসব পদক্ষেপ আরও কঠোর করা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবেই আমদানি কমেছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি কমেছে।
গত বছরের এপ্রিল-জুনে আমদানি করা হয়েছিল ৮২ কোটি ৯ লাখ ডলারের পণ্য। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৫৬ কোটি ডলারের ও এপ্রিল জুনে ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি প্রান্তিকেই আমদানি কমছে।
গত বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। একই সময়ে মোট আমদানি কমেছে ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১৬ শতাংশ। মোট আমদানির মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে করা হয়।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) স্থিতিও কমছে। জুন পর্যন্ত তাদের বিনিয়োগের নিট স্থিতি ছিল ৩৯৫ কোটি ডলার। এর আগে গত ডিসেম্বরে ছিল ৪১০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে ৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমেছে ঋণপ্রবাহ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি ঋণের বড় অংশই আসে আমদানির মাধ্যমে। আমদানি কম হওয়ায় এ খাতে ঋণের প্রবাহও কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। গত জুনে তা কমে ৬৯ কোটি ডলারে নামে। ওই সময়ে ঋণের স্থিতি কমেছে ১১ শতাংশ।
তবে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে। জুলাইয়ে ছিল ৬২ কোটি ডলার, আগস্টে তা বেড়ে হয় ৭১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৯৮ লাখ ডলারে। আগের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো ও বাড়তি সুদের কারণে এ খাতে পরিশোধ হচ্ছে কম। যে কারণে স্থিতি বেড়েছে।