৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১২টিতে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।
তিনটিতে জিতেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একটি মাত্র আসনে জয়লাভ করেন জাতীয়পার্টির প্রার্থী। চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কাল নতুন মন্ত্রিসভা কেমন হবে? তাতে চট্টগ্রাম থেকে কারা স্থান পাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে সরব আলোচনা।এদিকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আজ (বুধবার) শপথ নেবেন। কাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় শপথ নেবে নতুন মন্ত্রিসভা। এ মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে কারা কারা স্থান পাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে চলছে নানামুখী আলোচনা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে স্থান পেয়ে ছিলেন তিনজন। এবার সেই সংখ্যা বাড়িয়ে চারজনও হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ও অভিজ্ঞ সদস্যরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। আর নতুন করে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা। মন্ত্রিসভায় কারা-কারা থাকবেন, তা নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনেক বুঝে-শুনেই সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রেও তাই হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে স্থান পেয়েছিলেন তিনজন। এরা হলেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এবারও তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ তিনজনের বাইরে আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন থেকে টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নামও। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হন। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনিও আসার সম্ভাবনার কথা বলছেন অনেকে। এ চারজনের বাইরে নাম আসছে আরো অনেকের। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে কারা স্থান পাচ্ছেন তা পরিষ্কার হয়ে যাবে কাল সন্ধ্যায়।
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গেজেট জারির পর তাদের শপথ পড়ানো হবে। এরপর সংসদ সদস্যরা বৈঠক করে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করবেন। রাষ্ট্রপতি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়ানো হবে। এরপর নিয়োগপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ নেবেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আর এর মধ্য দিয়েই নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেই নির্বাচনে ২৬৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা, গঠন করেন ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এর ১৮ দিন পর মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন আরও ছয়জন। এরও দুই বছর ১০ মাস পর আরও দুই জনকে মন্ত্রী করা হয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। সেবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তখন অধিকাংশ পুরোনো মন্ত্রী বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়। সেই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিসভার আকার আরও বাড়ানো হয়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে, এ নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। এছাড়া, তিনটি আসন পায় অন্যরা। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার আকার হয় ৪৭ জনের। এর মধ্যে নতুন মুখ ছিলেন ৩১ জন। পাশাপাশি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় ছিলেন এমন অনেকেও এই মন্ত্রিসভায় স্থান পান।
সুত্র: পূর্বকোণ