হঠাৎ করে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে বেড়েছে নৌযান দুর্ঘটনা। গত দুই মাসেই এই চ্যানেলে ডুবেছে তিনটি নৌযান। এতে দেশের প্রধান এই বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের রুটে ঝুঁকি বাড়ছে।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের দুই নম্বর বয়ার কাছে একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে। গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ৯টার দিকে ‘মাগফিরাত নুর’ নামের এই ব্লাকহেডটি ডুবে যায়।
তার আগে গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে বন্দর চ্যানেলে ডুবে যায় এস.আর.এল-৪ নামের একটি ফিশিং বোট। গেল জানুয়ারির এই দুই নৌযান দুর্ঘটনার আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাত ৯টা ২০ মিনিটে ডুবেছিল একটি লাইটার জাহাজ। কর্ণফুলীর বাংলাবাজার এলাকায় এমভি মকসুদ-২ নামের ওই লাইটার জাহাজটি ডুবে গিয়েছিলো। যদিও পরবর্তীতে বন্দরের উদ্ধারকারী জাহজের সহায়তায় সেই লাইটার জাহাজ উদ্ধার করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
তবে বারবার এমন নৌযান দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল যেমন ঝুঁকিতে পড়ছে তেমনি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলেও অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। যা বিদেশিদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে।
এদিকে অবৈধ হলেও থেমে নেই বন্দর চ্যানেলে বাল্কহেড চলাচল। এমনকি প্রতিনিয়তই ঘটছে বাল্কহেড দুর্ঘটনা। কখনো বাল্কহেড গিয়ে জাহাজকে ধাক্কা দিচ্ছে আবার কখনো যাত্রীবাহী নৌকায় গিয়ে আঘাত করছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে প্রায়ই লাইটার জাহাজের বিকল্প হিসাবে বাল্কহেড বা ভলগেট দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এছাড়া কালুরঘাট এলাকা থেকে বালি বোঝাই ভলগেট চলতে দেখা যায় হরহামেশাই। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও পাথর, সিমেন্ট ও সিরামিকের গুঁড়া নিয়ে চলাচল করে এসব ভলগেট।
অবৈধ ঘোষণা করা হলেও প্রায় দুই শতাধিক বাল্কহেড বহির্নোঙরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে দিনরাত পণ্য খালাস করছে। দিনে অসংখ্য বাল্কহেড কর্ণফুলী নদীতেই নোঙর অবস্থায় থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে সামান্য জরিমানা করে তাদের দায় সারে। অথচ একটি বাল্কহেড ডুবলেই বন্দরের অপারেশন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বাল্কহেড চলাচলে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে সি ক্লাস (কোস্টাল) জাহাজ চলাচল করতে পারে। আর নির্ধারিত কিছু সময়ের জন্য এম ক্লাস (মাদার ভ্যাসেল) জাহাজ চলাচল করতে পারে। কিন্তু কোনো অনুমতি ছাড়াই বাল্কহেডগুলো বন্দর দিয়ে চলাচল করে। তাছাড়া ওসব বাল্কহেডে কোনো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। সেগুলো যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়লে বন্দর চ্যানেলের জন্য ক্ষতিকর। ওই ধরনের দুর্ঘটনা যদি চ্যানেলের মধ্যখানে হয় সেক্ষেত্রে বন্দরের জাহাজ অপারেশন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বে-ক্রসিংয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেয় ডিজি শিপিং (নৌবাণিজ্য দপ্তর)। নিষেধাজ্ঞাও দেয় তারা। তবে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল বন্দর চ্যানেলের জন্য বড় ঝুঁকি। সেজন্য বন্দরের পক্ষ থেকে ডিজি শিপিংকে এ ধরনের নৌযানের অনুমোদন না দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আর অনুমোদনহীন নৌযান কিংবা বাল্কহেড বন্দর চ্যানেল দিয়ে চলাচল করলে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সুত্র: পূর্বকোণ