এক সড়কেই বদলে গেছে নগরীর বাকলিয়া এলাকার চিত্র। সড়কের সাথে সাখে বদলে গেছে জীবনযাত্রার মানও।
দেড় কিলোমিটার সড়কজুড়ে নির্মিত হয়েছে শতাধিক দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অর্ধশতাধিক বহুতল ভবন নির্মাণাধীন। ৩০-৪০ লাখ টাকা প্রতি কাঠার জায়গার দাম হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। আমূল পরিবর্তন এসেছে যোগাযোগ ব্যবস্থার।
বলছি নগরীর চকবাজার থানাধীন চন্দনপুরা থেকে পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা পর্যন্ত জানে আলম দোভাষ সড়কের কথা। যার পূর্বের নাম বাকলিয়া এক্সেস রোড। একসময়ের ডোবা, অনুন্নত এবং ঘনবসতিপূর্ণ প্রবণ হিসেবে পরিচিত এলাকার পরিবর্তন হয়েছে এক সড়ককে কেন্দ্র করে।
সম্প্রতি জানে আলম দোভাষ সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বাকলিয়া অংশে উভয় পাশে সারি সারি দোকান, শোরুম, কনফেকশনারিসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। এসব ঘিরে মানুষের জনসমাগম বেড়েছে সেখানে। তবে এই সড়কে এখনও কোন গণপরিবহন চালু না হওয়ায় পরিবহন খরচ বাড়ছে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সড়কের অন্যতম সুবিধাভোগীরা হচ্ছেন দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা শহরগামী মানুষ। কোন প্রকার ভোগান্তি ও যানজট ছাড়াই চকবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় দ্রুতসময়ের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন তারা। চকবাজার এলাকাকেন্দ্রিক অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার রয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীর আগে কোতোয়ালী-আন্দরকিল্লা কিংবা বহদ্দারহাট হয়ে চাকবাজার যাতায়াত করতে হতো। এখন তাদের দূরত্ব অনেক কমেছে। সেই সাথে কমেছে খরচও।
চট্টগ্রাম কলেজের একাদশ শ্রেণির সাব্বির আহমেদ বলেন, সড়কটি নির্মাণের পর থেকে কলেজে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমাদের প্রায় এক ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হচ্ছে। আগে যেখানে বহদ্দারহাট হয়ে চকবাজার যেতে হতো, এখন সোজা যাওয়া যাচ্ছে। তবে এই সড়কে গণপরিবহন চালু করলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের সময়ের সাথে সাথে কিছু টাকাও সাশ্রয় হবে।
স্থানীয় মুদি দোকানদার আরিফ আহমেদ বলেন, ৭-৮ বছর আগেও সড়কের পাশের যে জায়গা ৩০-৪০ লাখ টাকা ছিল, তা এখন কোটি টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না।
সিডিএসূত্রে জানা যায়, যানজট কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যানে রাস্তাটি নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু (কর্ণফুলী সেতু) পর্যন্ত ৬ লেনের সংযোগ সড়ক নির্মিত হলেও নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ বলেন, বাকলিয়াবাসীদের চকবাজার ও আশপাশ এলাকায় যেতে বহদ্দারহাট হয়ে যেতে হবে না। এছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা চকবাজারমুখী শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগীরা দ্রুতসময়ের মধ্যে গন্তব্যে যেতে পারবেন। চকবাজারগামী মানুষকে চাক্তাই কিংবা বহদ্দারহাট ঘুরে যাতায়াত করতে হবে না। একদিকে মানুষের সময় বাঁচবে, অন্যদিকে কমবে ভোগান্তি।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, সম্প্রতি নির্মাণে আমাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ ছিল, এসব চ্যালঞ্জ মোকাবেলা করে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করতে হয়েছে। সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছুর আমূল পরিবর্তন এসেছে। এই সড়কটি ব্যবহারের মাধ্যমে বাকলিয়াবাসীর সময় ও অর্থ বাঁচবে। দ্রুতসময় ও অল্প খরচে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
গতবছরের ১৪ নভেম্বর ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকে সড়কটিতে পুরোদমে যানচলাচল করছে। নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এবং ঘনবসতিপূর্ণ বাকলিয়া এলাকার শাহ আমানত সংযোগ সড়কের পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি টাকা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং দশতলা ভবন নিয়ে জটিলতায় প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ হয়নি। পরবর্তীতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা।