‘অভিনন্দন সুজন ভাই। নতুন চেয়ারম্যান সিডিএ’- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রামের এক সাংবাদিক এমন একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার পরই খোরশেদুল আলম সুজনকে নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে।
এরপর সকাল থেকে নগরবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তুখোড় রাজনীতিবিদ খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হচ্ছেন।
গতকাল দিনভর সেই গুঞ্জনই ছিল চট্টগ্রাম নগরবাসী ও রাজনীতিসচেতন মানুষের মুখে মুখে। পবিত্র ওমরাহ হজ পালনে বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে আছেন। সিডিএ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুই বছরের জন্য চেয়ারম্যান হন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ। ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তিন বছরের জন্য পুনরায় চেয়ারম্যানের পদে রাখা হয়। আগামী ২৪ এপ্রিল বর্তমান চেয়ারম্যান দোভাষের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নগরবাসীর গুঞ্জন সত্যি হলে ২৪ এপ্রিল দোভাষের স্থলাভিসিক্ত হতে যাচ্ছেন খোরশেদ আলম সুজন।
সৌদি আরব থেকে গতকাল রাতে খোরশেদ আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, ‘মানুষের মুখে মুখে শুনতেছি। এখনো আমার কাছে সরকারিভাবে কোনো কনফারমেশন (নিশ্চিতকরণ) আসেনি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা-ই করেন, ভালোর জন্যই করেন। যদি এমন কোন প্রস্তাব পাই তাতেই আমি সন্তুষ্ট।’
খোরশেদ আলম সুজনের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সতীর্থ- সহযোদ্ধাদের কেউ কেউ অবশ্য সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে তার নিয়োগে নাখোশ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঘনিষ্ঠ সহচর গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সুজন সাহেব তৃণমূল মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করে আসছেন দীর্ঘ সময় ধরে। মাঠে ময়দানে চরে বেড়ানোর এ মানুষকে সিডিএর মতো জায়গায় মানায় না। করোনাকালে প্রশাসক হিসেবে স্বল্পকালীন দায়িত্ব পালনের সময় ঝুঁকি নিয়ে তিনি নগরীর আনাচে কানাচে যেভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন। নগরবাসীর সমস্যা- দুর্ভোগ নিজের মতো করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি নিকট অতীতে আর কোন নেতার মধ্যে দেখা যায়নি। এক কথায় নগরীতে একটি জাগরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, সেটিকে কাজে লাগিয়ে নাগরিক সেবার সুযোগ দেয়ার জন্য তার মতো নেতার খুবই দরকার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নগরবাসী তাকে দেখতে চায়, এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন তার সতীর্থ-সহযোদ্ধারা।
২০২০ সালের ৬ আগস্ট খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘নগরসেবায় ক্যারাভ্যান’ ব্যতিক্রমী শোভাযাত্রা শুরু করেছিলেন। নগর ঘুরে ঘুরে নগরবাসীর সমস্যা চিহ্নিত করে তা দ্রæত সমাধানে সচেষ্ট ছিলেন। ১৮০ দিনের দায়িত্ব পালনে নগরবাসীর বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
রাজনীতির হাতেখড়ি উত্তর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায়। ১৯৭০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সেই থেকেই রাজনীতির পথচলা শুরু হয়। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পথপরিক্রমায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আসনেও আসীন হয়েছিলেন। স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালি সৈনিকদের সেবা দেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে চট্টগ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন। সত্তরের দশকের শেষ ভাগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদবিরোধী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হয়ে ঢাকায় আন্দোলন সংগঠিত করেন এবং দুই বার কারাবরণও করেন।
নব্বইয়ের দশকে দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের পর যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ছিলেন প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য। গভীর রাজনৈতিক জ্ঞানের কারণে আওয়ামী লীগের তাত্তি¡ক নেতা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ১৪ দলের চট্টগ্রামের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন সুজন।
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে-সুসময়ে এবং দেশের সংকটময় মুহূর্তে আন্দোলন-সংগ্রামে, কখনো নাগরিক সংকট সমাধানের দাবিতে বারবার রাজপথে সরব উপস্থিতি রয়েছে সুজনের। তবে চার বার জাতীয় সংসদ সদস্য এবং একাধিকবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। তবে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে দলীয় প্রার্থী বদল করে তাকে বাদ দেওয়া হয়। তারপরও দল ও রাজনীতির মাঠে দমে যাননি তিনি। দলের পরীক্ষিত ও পোড় খাওয়া নেতা ৫৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয়বারের মতো স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন।
সুত্র: পূর্বকোণ