গত প্রায় দুই বছর ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং শান্তিপূর্ণভাবে দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরামর্শ চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি মস্কোতে ৫ দিনের সরকারি সফরে গিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই সফরে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
বৈঠকে জয়শঙ্করকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানান, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযানের অবসান করে রাজনৈতিক পন্থায় ও শান্তিপূর্ণভাবে দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন ইস্যু সমাধান করতে মস্কো আগ্রহী এবং এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ এবং সহযোগিতা চাইছেন তিনি।
জয়শঙ্কারকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুবই খুশি হবো, যদি আমাদের বন্ধু (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী মোদি রাশিয়া সফরে আসেন। (গত দু’বছরে) বেশ কয়েকবার তার (নরেন্দ্র মোদি) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি কেমন, বর্তমানে সেখানে কী চলছে— সে সম্পর্কে আমি তাকে বিস্তারিত জানিয়েছি।’
‘এবং আমি জানি যে, এই ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে তার পক্ষে যতখানি করা সম্ভব— তা তিনি করতে চান। তিনি যদি মস্কো সফরে আসেন, সেক্ষেত্রে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারব এবং আমার বিশ্বাস, সেই আলোচনা থেকে একটি উপায় বেরিয়ে আসবে।’
বুধবার মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন জয়শঙ্কর। সেই সংবাদ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজের সাম্প্রতিক বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত তিনি। পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে টেলিফোনে নিয়মিতই যোগাযোগ হয় এবং আগামী বছর প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করার কথা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, শিগগিরই সেই বৈঠক হবে।’
চলতি সফরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং উপ প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। সেই বৈঠকে সামরিক ও অর্থনৈতিক খাতে দুই দেশের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।
প্রসঙ্গত, প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবিরের জেরে ইউক্রেনের সঙ্গে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর পুতিনের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। সেই অভিযান এখনও চলছে এবং অভিযানের গত দুই বছরে ইউক্রেন ও রুশ বাহিনীর হাজার হাজার সেনা সদস্য ও ইউক্রেনের বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছেন।
এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মস্কো এবং কিয়েভ— উভয়কেই শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সমস্যাগুলো সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
সুত্র: এনডিটিভি