১০টি দল, ৫ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর- প্রায় ৫৪ দিন, ঘুরে-বেড়াবে ভারতের ১০টি শহরে। তুমুল লড়াই চলবে মাত্র একটি ট্রফির জন্য। সেই ধুন্ধুমার লড়াই শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর মাঠে গড়াচ্ছে আজ, বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়, আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে গত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দুই দল- ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ২০১৯ বিশ্বকাপে লর্ডসে যে নাটকের জন্ম দিয়েছিল এই দুই দল, তেমন কিছুরই প্রত্যাশা করছেন আজ ক্রিকেটপ্রেমীরা। আগামী ৫৪টি দিন, এমন ক্রিকেটেই বুঁদ হয়ে থাকতে চান বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমী, ক্রিকেটপ্রেমীরা।
গত বিশ্বকাপের সেই তুমুল উত্তেজনাকর ফাইনালটির কথা একবার চিন্তা করে দেখুন! নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা। খেলা হলো ১০২ ওভারের। তবুও নাটক শেষ হয়নি। বাউন্ডারির হিসাবে শেষ পর্যন্ত গ্রীষ্মের মনোরম সন্ধ্যায় লর্ডসে দুঃস্বপ্ন দেখলো নিউজিল্যান্ড। ১০২ ওভারের শেষ বলে বাটলারের দ্রুত গতির রানআউটে হাত থেকে শিরোপা ফসকে গেলো কিউইদের। প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সেই ফাইনালে নির্ধারিত ৫০ ওভারে খেলা শেষ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৫ রান করে ইংল্যান্ড। ১৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে ওভারের শেষ বলে কিউইদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান। স্ট্রাইকে তখন মার্টিন গাপটিল।
পায়ের ভেতরের দিকে করা জোফরা আর্চারের বল ডিপ মিডউইকেট অঞ্চলে গড়িয়ে মারলেন গাপটিল। সেখান বল কুড়িয়ে উইকেটরক্ষক জস বাটলারের কাছে থ্রো করেন জেসন রয়। সে বল ধরে নিয়ে বিদ্যুৎগতিতে স্ট্যাম্প ভাঙেন বাটলার। তাতেই স্বপ্ন ভাঙে নিউজিল্যান্ডের। ২ রান নেওয়ার চেষ্টা করে রানআউট হয়ে যান গাপটিল। স্কোর সমান থাকলেও বেশি সংখ্যক বাউন্ডারি হাঁকানোর সুবাধে জয় পায় ইংল্যান্ড।
তবে কি আবারও সেই নাটকীয় ক্রিকেট উপহার দেবে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। ইতিহাস কি আবারও ফিরে আসবে ভারতের মাটিতে? তেমনটার সম্ভবনা হয়তো কম। ক্রিকেট সবসময়ই গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেই অনিশ্চয়তা ভেদ করে কখন কী ঘটে বলা মুশকিল।
তবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আজ ভারত বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছে ২০১৫ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। সুতরাং বলা যায় আরেকটি ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২৩ বিশ্বকাপ।
তবে তেমন নাটকীয়তা দুই দল উপহার দিতে পারবে কি না সন্দেহ। কারণ ইনজুরির কারণে এই ম্যাচটি না খেলার সম্ভাবনা গত বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার বেন স্টোকস। কোমরের অস্বস্তির কারণে তাকে একাদশে নাও দেখা যেতে পারে।
যার ব্যাটে ভর করে গতবার ইংলিশরা স্বপ্নের সৌধ রচনা করেছিল, তাকে এবার উদ্বোধনী ম্যাচেই না পাওয়াটা তাদের জন্য অবশ্যই বড় দুশ্চিন্তার কারণ। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পেসার জোফরা আর্চার এবার নেই। ছিটকে গেছেন ওপেনার জেসন রয়ও।
শুধু ইংল্যান্ড কেন, নিউজিল্যান্ডও পাচ্ছে না তাদের সেরা দুই তারকাকে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের উদ্বোধনী ম্যাচ না খেলারই কথা। আগেই জানানো হয়েছে এ তথ্য। বিশ্বকাপ শুরুর একদিন আগে জানা গেলো, তাদের অন্যতম সেরা পেসার টিম সাউদিও খেলতে পারবেন না এই ম্যাচ। আঙুলের ইনজুরি ভোগাচ্ছে তাকে।
তবুও, দুই দলে শক্তির ভারসাম্য অনেক বেশি। বেশ শক্তিশালী দুই দল। যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিংয়ে। ইংলিশদের স্কোয়াডে জনি বেয়ারেস্ট, ডেভিড মালান, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জস বাটলার, লিয়াম লিভিংস্টোনদের মতো ব্যাটার রয়েছেন। স্যাম কারান, মইন আলির মতো অলরাউন্ডার, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, আদিল রশিদ এবং রিসি টপলির মতো বোলার থাকার পর এই দলটিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের চেহারাই এনে দিয়েছে। আরেকটি বিশ্বকাপ তারা যে ঘরে তোলার সামর্থ্য রাখে, তা স্কোয়াড দেখলেই বোঝা যায়।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড দলে দুই সেরা তারকা না থাকলেও উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, ড্যারিল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম ল্যাথাম, জিমি নিশাম, মিচেল সান্তনার, ইস শোধি, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসন এবং ট্রেন্ট বোল্টদের মত ক্রিকেটার রয়েছে। যারা যে কোনো সময় যে কোনো শক্তিশালী দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে।
সুতরাং, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই লড়াই হতে যাচ্ছে দারুণ শক্তিধর দুটি দেশের। সবাই অপেক্ষায় সেই লড়াই দেখার জন্য।