ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডকে একটি অভাগা দল বললে বেশি বলা হবে না। সত্যিই খুব অভাগা। চমৎকার সব খেলোয়াড় সমম্বয়ে গড়া দল নিয়ে তারা বিশ্বকাপ খেলতে আসে; কিন্তু সাফল্যের দেখা মেলে না। সাফল্য তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মাতে। একটা সময় তো কিউইদের বলা হতো সেমিফাইনালের দল। সামর্থ্য থাকলেও সেমিফাইনাল থেকে ওপরে ওঠা সম্ভবত হতো না তাদের। সে অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছে। এখন তারা ফাইনালিস্ট। সর্বশেষ দুই আসরের ফাইনালিস্ট তারা।
নিউজিল্যান্ড হয়তো ভাগ্যের সহায়তা পাচ্ছে না। সে কারণেই হয়তো একের পর এক আসরে সম্ভাবনা তৈরি করেও শিরোপা হাতে তুলে নিতে সক্ষম হচ্ছে না।
গত ছয় বিশ্বকাপের পাঁচটিতেই সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। গত দুই আসরের আগ পর্যন্ত ছয়বার তারা শেষ চারে উঠেছিল। আর গত দুই আসরে খেলেছে ফাইনালে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের কথা তো তারা চিন্তাই করতেই চাইবে না। চিন্তা করলেই যে শুধু আফসোস বাড়বে!
গত বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় নিউজিল্যান্ড। ভাগ্য আর নিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে তারা। ৫০ ওভারে দুই দল স্কোরকার্ডে সমান ২৪১ রান করে তুলেছিল। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সেখানেও দুই দলের রান সময়। ইংল্যান্ড করেছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৫ রান। জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল শেষ বলে হলেন রান আউট। ফলে এখানেও টাই। শেষ পর্যন্ত অদ্ভূত এক নিয়মে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো ইংল্যান্ড। ফলে ফল বিবেচনায় এসেছিল বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির সংখ্যা। ওভার বাউন্ডারির সংখ্যা সমান ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের বাউন্ডারি সংখ্যা বেশি থাকায় (২৬-১৭) হতাশ হতে হলো নিউজিল্যান্ডকে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডের র্যাংকিংটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। চার নম্বর থেকে তারা চলে গেছে ৬ নম্বরে। তবে সর্বশেষ দশ সিরিজের তাদের সাফল্য ঈর্ষনীয়। দশ সিরিজের সাতটিতেই জয় কিউেইদের।
এ সময় তারা হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে। হেরেছে ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে। তিনটিই ছিল অ্যাওয়ে সিরিজ। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজে হেরেছিল ১-৪ ব্যবধানে। তবে পাকিস্তানকে আগের সিরিজে তাদের মাটিতেই হারিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে।
গতবারের ফাইনালিস্ট দলটি এবারের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছে। প্রতিপক্ষ সেই ইংল্যান্ড। যাদের কাছে হেরে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল। এরপর একে একে তারা মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার। ৯ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে তাদের গ্রুপ পর্ব।
নিউজিল্যান্ডের অবশ্য এ উপমহাদেশে বিশ্বকাপের রেকর্ডটা তেমন সমৃদ্ধ নয়। সব মিলিয়ে দেশটি আটবার সেমিফাইনাল খেলেছে। কিন্তু একবারই এ উপমহাদেশের টুর্নামেন্টে তারা শেষ চারে পৌঁছানোর কৃতিত্ব দেখায়। ২০১১ সালের ঘটনা সেটি। যদিও পরের দুবারই তারা ফাইনালিস্ট।
বর্তমান নিউজিল্যান্ড দলটিকে একঝাঁক ঝলমলে তারকা রয়েছে। অসাধারণ সব ব্যাটার দলটিকে আশাবাদী করে তুলেছে। উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন, গ্লেন ফিলিপস, টম ল্যাথামরা যে কোনো দলের হাল ধরতে পারেন। দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য যে তাদের আছে তার প্রমাণ দিয়েছেন বারবার।
বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত লকি ফার্গুসন, মিচেল সান্তনার, ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, ইস শোধি, টিম সাউদির মতো বিশ্বমানের বোলাররা। অলরাউন্ডার হিসেবে রয়েছেন ড্যারিল মিচেল, মার্ক চাপম্যান, জেমস নিশাম, রাচিন রবিন্দ্ররা।
২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ৮৯ ম্যাচ খেলে ৫৪ ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছে। হেরেছে ৩৩ ম্যাচে। তাদের চেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে শুধু অস্ট্রেলিয়া। কিউইদের খেলা ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা ৭৯৭। ৩৬৬ ম্যাচে জয়, হার ৩৮২ ম্যাচে।