এক ম্যাচে সব সময়ই দুই দলকেই খেলতে হবে, এমন দিব্যি কে দিয়েছে? টুর্নামেন্টে যখন বাঁচা-মরার সমীকরণ চলে আসে, যখন নিজেদের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে যায় অন্য দলের জয়-হারের হিসাব-নিকাশ, তখন এক ম্যাচে তিন-চার দলও খেলতে পারে।
আজ পুনেতে যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ড লড়েছে মাঠে, আর এ ম্যাচে সবচেয়ে আগ্রহী দর্শক ছিলেন পাকিস্তানের খেলোয়াড় ও ক্রিকেটপ্রেমীরা!
নিশ্চিত ম্যাচের আগে, ম্যাচজুড়ে ‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা’ সুরেই গলা চড়িয়েছেন পাকিস্তানের মানুষ। নিউজিল্যান্ড হেরে গেলেই যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দৌড়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ চলে আসত পাকিস্তানের হাতে। শেষ পর্যন্ত পুনেতে পাকিস্তানের সে আশা পূর্ণ হয়েছে, এবং কীভাবে! দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে সেই যে ভুলটা করেছে নিউজিল্যান্ড, সেটাই সম্ভবত তাদের পায়ে কুড়াল হয়ে এসেছে। আগে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে তুলেছে ৩৫৭ রান, জবাব দিতে নেমে একেবারে ভেঙেচুরে পড়া নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপ গুটিয়ে গেছে ১৬৭ রানে।
১৯০ রানের বিশাল এই জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত। বিশাল এই হারে নিউজিল্যান্ড হঠাৎ পড়ে গেছে শঙ্কায়। আর নিউজিল্যান্ডের যেকোনো ব্যবধানের হারেই আশা খুঁজে পেত পাকিস্তান, সেখানে বিশাল এই হারে রানরেটের হিসাবে তাকিয়েও চোখ চকচক করে ওঠার দশা বাবর আজমদের। এই বিশ্বকাপের ফরম্যাটই এমন যে, গ্রুপ পর্বের পর সেরা চার দল নিয়ে হবে সেমিফাইনাল, তবে আজ দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে পাকিস্তানকে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান যে নিজেদের পরের ম্যাচে একে অন্যেরই মুখোমুখি! সে ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জিতলে পাকিস্তানের আশা শুধু কাগজে-কলমেই টিকে থাকবে, নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনালে ওঠা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে।
পাকিস্তানের কাজটা এখনো কঠিন, নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানেই হারাতে হবে তাদের। বেঙ্গালুরুতে সে ম্যাচে পাকিস্তান জিতলেই পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড দুই দলেরই পয়েন্ট হবে ৮ ম্যাচে ৮। এরপর পাকিস্তান শেষ ম্যাচ খেলবে টুর্নামেন্টে ধুঁকতে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে, আর নিউজিল্যান্ডের শেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৮ রানের জবাবেও শেষ পর্যন্ত দারুণ লড়েছে নিউজিল্যান্ড, যদিও হেরে গেছে ৫ রানে। আজ তাই দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৫৭ রানের পরও আশা ছিল নিউজিল্যান্ড হয়তো কিছুটা লড়াই করবে। কোথায় কী! এত রান তাড়ায় যা যা করা উচিত, নিউজিল্যান্ড ঠিক তার উল্টোটা করেছে।
এত বড় রানতাড়ায় শুরুটা ভালো হওয়ার দরকার, তৃতীয় ওভারেই দলীয় ৮ রানে ডেভন কনওয়ের উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড নবম ওভারের শেষ বলে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ সেঞ্চুরি করা রাচিন রবীন্দ্রকে। প্রথম পাওয়ার প্লে-র দশ ওভারে তুলতে পেরেছে মাত্র ৫১ রান, পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার তিন বল পর আউট হয়ে গেছেন উইল ইয়াংও। ১০০ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড!
সাড়ে তিন শ-র ওপরে যখন লক্ষ্য, অন্তত দু-তিনজন ব্যাটসম্যানকে বড় ইনিংস খেলতে হতো। নিউজিল্যান্ড ইনিংসে শুধু গ্লেন ফিলিপসই যা ফিফটি করেছেন, তা-ও ফিফটি পেয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান ম্যাট হেনরিকে অন্য প্রান্তে রেখে। বোলিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া হেনরি দলের প্রয়োজনে শুধু ব্যাট হাতে নামতে পেরেছেন, অতটুকুই সার। ফিলিপসের পর নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান উইল ইয়াংয়ের ৩৩, এ দুজনের বাইরে দুই অঙ্ক পেরিয়েছেন শুধু ড্যারিল মিচেল (২৪)।
এই যখন অবস্থা, বড় জুটি আর হবে কোত্থেকে! ৪০ পেরোতে পারেনি কোনো জুটি, ৩০-এর ওপরে জুটি হয়েছে দুটি – দ্বিতীয় উইকেটে ইয়াং ও রবীন্দ্রর ৩৭ রানের জুটি, আর শেষ উইকেটে হেনরিকে (৯ বলে ০) অন্য প্রান্তে রেখে গ্লেন ফিলিপস জুটিতে এনে দিয়েছেন ৩৪ রান।
নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও মেরু ব্যবধান। কিউইদের কোনো স্পিনারই উইকেট পাননি, দক্ষিণ আফ্রিয়ার কেশব মহারাজ চার উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের মিডল ও লোয়ার অর্ডার। নিউজিল্যান্ডের পেসারদের মধ্যে টিম সাউদি (২) ও জিমি নিশাম (১) উইকেট পেলেও দুজনের ১৫.৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়েছে ১৪৬ রান, ট্রেন্ট বোল্টই যা ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। বোল্ট অবশ্য নিউজিল্যান্ডকে ভুগিয়েছেন এক র্যাসি ফন ডার ডুসেনেরই ক্যাচ দুবার ছেড়ে।
উল্টোদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মার্কো ইয়েনসেন (৩১ রানে ৩ উইকেট) আর কোয়েটজি (৪১ রানে ২ উইকেট) ও কাগিসো রাবাদা (১৬ রানে ১ উইকেট) শুরুতে নাড়িয়ে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডকে। শেষে মহারাজ দেখিয়েছেন ঘূর্ণির ঝলক।