ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের প্রত্যাশা ছিল আরও একবার মাশরাফি বিন মর্তুজার ঝলক দেখা যাবে সিলেট স্ট্রাইকার্সে। গতবারই নাম বদলে প্রথমবার স্ট্রাইকার্স হিসেবে খেলতে আসে সিলেট। মাশরাফি অধিনায়ক ছিলেন। ছিলেন মুশফিকুর রহিমের মত তারকাও। তবে তাওহীদ হৃদয় এবং নাজমুল হোসেন শান্ত হয়ে উঠলেন সিলেটের বড় তারকা। তরতর করে দলটা চলে যায় বিপিএলের ফাইনালে।
মুশফিক আর তাওহীদ হৃদয় বিদায় নিলেও এবারেও একেবারেই ফেলে দেওয়ার মত দল অন্তত করেনি সিলেট স্ট্রাইকার্স। রায়ান বার্ল, দুশান হেমন্ত, হ্যারি টেক্টর কিংবা বেন কাটিং এর মত পরিচিত তারকা আছেন সিলেট দলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত সামিত প্যাটেলও আছেন সিলেট স্কোয়াডে।
দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ইয়াসির আলী রাব্বি, নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা নাইম হাসানের মত নাম দেখা যায় সিলেটের স্কোয়াডে। সবার ওপরে মাশরাফির নেতৃত্ব তো আছেই। এতকিছুর পরেও সিলেটে মাশরাফি ম্যাজিক যেন কাজই করছে না। প্রথম চার ম্যাচেই দেখতে হয়েছে হারের মুখ।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের এমন দুর্দশার পেছনে বেশ কিছু কারণ অবশ্য দাঁড় করানো যায়। সবার আগে অবশ্য মাশরাফি ইস্যুর কথাই বলা যেতে পারে। আছে তুষার ইমরানের মতো কোচের অনুপস্থিতি, একাদশ গঠনের অস্থিরতার মত ইস্যু।
অধিনায়ক যখন চাপের মুখে
মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা অধিনায়ক বললেও অসন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ কম। বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি শিরোপা তো তিনিই জিতেছেন। এছাড়া জাতীয় দলে কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে মাশরাফি থাকা মানে, তিনিই অধিনায়ক। কিন্তু এবার যেন বিতর্কটাই সঙ্গী ম্যাশের।
ব্রডকাস্টিং পার্টনারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফিরই সাবেক সতীর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল প্রশ্ন তুলেছিলেন মাশরাফির ফিটনেস নিয়ে। তিনি সত্যিই খেলার মত অবস্থায় আছেন কিনা বা নিজ থেকে খেলতে আগ্রহী কিনা সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মাশরাফি নিজেও জানিয়েছেন, ফিট না হয়ে খেলা আদর্শ না। কিন্তু সিলেট দলের ম্যানেজার স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজ মালিকপক্ষের চাওয়াতেই ম্যাশ নামছেন মাঠে।
মাশরাফি নিজে পারফর্ম করছেন নিজের ছায়া হয়ে। বোলিংয়ে রানআপ কমিয়ে হয়েছেন অফ-স্পিনার। ব্যাটার হিসেবে রানিংয়ে ব্যাপক আকারে ভুগছেন। রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচে রানআউটই যার বড় প্রমাণ। মাশরাফি এরমাঝে জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হয়েছেন। সবমিলিয়ে দলকে যিনি একসুতোয় বেঁধে রাখার কারিগর, তিনিই হয়ত আছেন খানিকটা চাপের মাঝে।
তুষার ইমরানের অনুপস্থিতি
তুষার ইমরান বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি বললে মোটেই বাড়াবাড়ি হয়না। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক তিনি। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় আছেন দ্বিতীয় স্থানে। ক্রিকেটের বাইশ গজ ছেড়ে থিতু হয়েছেন কোচ হিসেবে। আর সেখানেও তিনি যে বেশ সফল তা বোঝা গিয়েছিল গতবারই। সিলেট স্ট্রাইকার্সে ছিলেন ব্যাটিং কোচ হয়ে। তিনি এবার নেই সিলেট শিবিরে।
দলের ব্যাটার জাকির নিজেও স্বীকার করলেন ব্যাটিং ইউনিটে সমস্যার কথা, ‘কিছুটা বলতে পারেন (কোনো কিছু কাজে লাগছে না)। ব্যাটিংয়ে আমরা ভালো স্কোর দিতে পারিনি। আজকের ম্যাচে বোলাররা ভালো বল করেছিল কিন্তু আমরা ওটা চেজও করতে পারিনি। হয়ত দ্রুত উইকেট যাওয়ার কারণে আমরা ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছি।’
এবার তুষার ইমরান আছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হেডকোচ হিসেবে। আর চট্টগ্রামের ব্যাটিংয়ের শক্তিমত্তা দেখলেই বোঝা যায় তার কার্যকারিতা। তানজিদ হাসান তামিম, শাহাদাত হোসেন দিপু, কার্টিস ক্যাম্ফার, আভিস্কা ফার্নান্দো সবাই রান পাচ্ছেন নিয়মিত। চট্টগ্রামও আছে ছন্দে। কোচ তুষারের অভাবটাও তাই একেবারে ফেলে দিতে পারেনা সিলেট।
সেরা একাদশ নিয়ে অনিশ্চয়তা
এখন পর্যন্ত বিপিএলে নিজেদের সেরা একদশই বুঝে পায়নি সিলেট স্ট্রাইকার্স। চার ম্যাচেই তারা খেলিয়ে ফেলেছে ১৬ জন ক্রিকেটারকে। ব্যাটিং অর্ডারেও আসছে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন। দেখে মনে হতেই পারে এ যেন ২০২৩ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলের প্রতিচ্ছবি।
সেরা একাদশটা ঠিক করার কাজটা তাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সেটা গতকাল সিলেটের খেলোয়াড় জাকির হাসানও স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘কিছুটা বলতে পারেন। এরকম যখন হারতে থাকেন তখন সেরা একাদশ সেট করা কঠিন। তবুও আমরা চেষ্টা করছি সেরা কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়ার। দেখি সামনের ম্যাচে কী হয়।’
সবমিলিয়ে সিলেটের জন্য এবারের পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন। এখনো কাগজে কলমে প্লে-অফের স্বপ্নটা টিকে আছে মাশরাফির দলের জন্য। তবে কাজটা যে কঠিন তা জানেন দলের প্রত্যেকেই। সিলেট স্ট্রাইকার্স আপাতত খেলছে নিজেদের ঘরের মাঠে। নিজেদের সমর্থকদের সামনে একটা জয় অন্তত প্রত্যাশা করতেই পারে সিলেট স্ট্রাইকার্স।