বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ওয়াসা সার্কেল ও বাদুরতলা এলাকায় দুটি বাস ও একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চট্টগ্রামে দুটি বাসসহ তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে নগরীর ওয়াসা সার্কেল ও বাদুরতলা এলাকায় দুটি বাস ও একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, এক ব্যক্তি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী অপরাধীকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে রাত সোয়া ১১টার দিকে ওয়াসা সার্কেল এলাকায় পার্ক করা দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট দ্রুত সাড়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র অফিসার খান খলিলুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে সমন্বিত প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরমান হোসেন জানান, বাস দুটি ওয়াসা এলাকার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের পশ্চিম গেটের সামনে ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড় করানো ছিল।
অবরোধ-হরতাল
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা পঞ্চম দফার দ্বিতীয় দিনের অবরোধ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে হরতাল পালন করছে দুটি রাজনৈতিক জোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির দ্বিতীয় দিনের অবরোধ, একই সময়ে আধাবেলার হরতাল শুরু হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এবং সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শুরু হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা প্রায় দিনই ঘটছে। তফসিল ঘোষণা হওয়ায় বিবাদমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সহিংসতার দিকে যাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বুধবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এরপর সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি এবং সমমনা দল ও জোটগুলোর নেতাকর্মীরা। এ সময় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি প্লাটুন স্ট্যান্ডবাই রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ৩২ প্লাটুন এবং সারাদেশে ১৯৭ প্লাটুনসহ মোট ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
তফসিলকে স্বাগত, তফসিলকে প্রত্যাখ্যান
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। আওয়ামী লীগের বাইরে সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে জাতয়ি পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ নিয়ে এখনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
বিরোধী নেতারা বলছেন, বিবাদমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই তফসিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো “ভোটাধিকার হরণে” এই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে এই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ যদি নির্বাচনী ট্রেন ধরতে না পারেন, তাতে তাদের করার কিছু নেই।
দুই দল তাদের সমমনাদের নিয়ে দুই মেরুতে। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক সমঝোতার আশা করেছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। প্রধান তিন দলকে সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসি বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় তফসিল হয়েছে। সংবিধান মেনে ভোটের আয়োজন করা ইসির দায়িত্ব। রাজনৈতিক ঐক্য তৈরির দায়িত্ব ইসির নয়।
ইসির তফসিল
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন থেকেই প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। প্রচারণার জন্য ২২ দিন সময় পাবেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটারসংখ্যা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি এবং ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সেই হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে গত ১ নভেম্বর থেকে।