তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বাইরে রওশন এরশাদ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা পঞ্চম দফার দ্বিতীয় দিনের অবরোধ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে হরতাল পালন করছে দুটি রাজনৈতিক জোট।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির দ্বিতীয় দিনের অবরোধ, একই সময়ে আধাবেলার হরতাল শুরু হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এবং সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শুরু হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। আওয়ামী লীগের বাইরে সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ নিয়ে এখনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
বিরোধী নেতারা বলছেন, বিবাদমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই তফসিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো “ভোটাধিকার হরণে” এই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে এই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ যদি নির্বাচনী ট্রেন ধরতে না পারেন, তাতে তাদের করার কিছু নেই।
দুই দল তাদের সমমনাদের নিয়ে দুই মেরুতে। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক সমঝোতার আশা করেছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। প্রধান তিন দলকে সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসি বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় তফসিল হয়েছে। সংবিধান মেনে ভোটের আয়োজন করা ইসির দায়িত্ব। রাজনৈতিক ঐক্য তৈরির দায়িত্ব ইসির নয়।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন থেকেই প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। প্রচারণার জন্য ২২ দিন সময় পাবেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটারসংখ্যা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি এবং ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সেই হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে গত ১ নভেম্বর থেকে।