ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক ‘মা’। ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা।
তাইতো মমতাময়ী মায়ের সম্মানে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’ পালন করা হয়। সেই হিসাবে আজ ১২ মে বিশ্ব মা দিবস।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নানা আয়োজনে পালিত হবে দিনটি।
আব্রাহাম লিংকনের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে- ‘যার মা আছে সে কখনই গরীব নয়।’ অর্থাৎ কেবল মায়ের আশ্রয় থাকলেই বন্ধুর পথের নানা বিপদ পাড়ি দেওয়া যায় সহজেই। মা থাকা মানে সবচেয়ে বড় ভরসা ও ভালোবাসার জায়গাটি অক্ষুণ্ণ থাকা। আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মায়ের কাছেই। সামর্থের সবটুকু দিয়ে হলেও মা দেখতে চান সন্তানের হাসিমাখা মুখ।
যিনি মা হারিয়েছেন, তিনি যেন নিজের একটি অংশকেই হারিয়ে ফেলেছেন। যদিও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা চাই প্রতিটি দিনই, তবুও একটি বিশেষ দিন যেন আমাদের মায়ের জন্য আবেগ প্রকাশের কথা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
মা দিবসটি আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দেয় সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতি দায়িত্ব ও সম্মানের কথা। এদিন বিশেষ কিছু করে মাকে খুশি করতে দোষ নেই।
প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের আরাধনা, প্রাচীন রোমানে দেবী জুনোর আরাধনা ও ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে মাদারিং সানডের মতো বেশ ক’টি আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম মা দিবসের ধারণা সামনে আসে। মায়েদের সম্মানে মাদারিং সানডে পালিত হতো নির্দিষ্ট একটি রোববারে। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক নারীর হাত ধরে।
১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদার’স ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিল। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস।
এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে হার মানেননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।
অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
সুত্র: উত্তরণবার্তা