ইজতেমায় ৬৬ দেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং ইসলামের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় মোনাজাত শুরু হয়ে পৌনে ১২টার দিকে শেষ হয়। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম।
আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা করেন উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি। ২৬ মিনিটের এই মোনাজাতে দুই হাত ওপরে তুলে লাখ লাখ মুসল্লি বারবার বলছিলেন, “আমিন আমিন”। মোনাজাতের সময় এই ধ্বনিতে পুরো টঙ্গী এলাকা “আমিন আমিন” ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
রবিবার ফজরের পরে বয়ানে ছিলেন মুফতি মাকসুদ (ভারত)। বাংলা তরজমা করেছেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। বয়ানের পরেই দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ (ভারত)। বাংলা তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
প্রথম পর্বের ইজতেমায় ২০ মুসল্লি এবং দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় সাত মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। প্রথম পর্বে ৭২টি দেশ থেকে আট হাজার এবং দ্বিতীয় পর্বে ৬৫ দেশের ৯,২৩১ জন বিদেশি অংশগ্রহণ করেন।
মহাসড়কে বসে মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসল্লি রেজাউল করিম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “মোনাজাতের আগে বয়ান শুনেছি। হুজুর ফজিলত ও ইমান-আমলের কথা বলেছেন। তিনি চিল্লায় সাথী ভাইদের উদ্দেশে ইমান-আমল পালন করা বিষয়ে কথা বলেছেন। যারা সূরা ফাতেহা ভালোভাবে জানেন না, তাদের সূরা ফাতেহা শিখিয়েছেন।”
তিনি জানান, অজু করার সময় তার স্মার্টফোন চুরি হয়ে গিয়েছে। তাই বাড়িতে যোগাযোগ সমস্যা হয়ে গেছে।
বিদেশি মুসল্লিদের মধ্যে আরবি ভাষাভাষীর ছিলেন ৭৩২ জন, ইংরেজি ভাষাভাষীর ২,৬১৫ জন, উর্দু ভাষাভাষীর ২,৬৬২ জন, পশ্চিমবঙ্গের ২,৭৫৯ জন এবং অন্যান্য ভাষাভাষীর ২৭৩ জন ইজতেমায় অংশ নেন। এছাড়াও ১৯০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীও ছিলেন।
ভারত থেকে এবারের ইজতেমায় সর্বাধিক মুসল্লি এসেছেন। এ বছর ভারত থেকে ৪,৬০১ জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৭৭৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ৫৮২ জন, নেপাল থেকে ৪৯০ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ৪৭৪ জন, থাইল্যান্ড থেকে ২৫৫ জন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮৫ জনসহ বিশ্বের ৬৫টি দেশের মোট ৯,২৩১ জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নেন।
টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রাকিবুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলবে। কুমিল্লা, আখাউড়া ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে পাঁচ মিনিট যাত্রাবিরতি করবে।”
মোনাজাত উপলক্ষে ইজতেমার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানাসহ অফিস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেছেন। গত ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার (যোবায়ের আহমদ) প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।