সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৪৮টিই পাবে আওয়ামী লীগ।
স্বতন্ত্র সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে ঐক্যমত হওয়ায় তাদের প্রাপ্য ১০ আসনেও প্রার্থী দেবে সরকারি দল। বুধবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
আইন অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনে জয়ী দল বা জোটগুলোর মধ্যে ৫০টি সংরক্ষিত আসন আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়। সাধারণভাবে প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৩৭, স্বতন্ত্র পাচ্ছে ১০ জাতীয় পার্টি দুটি ও অন্যরা একটি আসন। এখন স্বতন্ত্রদের ১০ ও অন্যদের একটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয় দেবে।
রোববার গণভবনে স্বতন্ত্র সদস্যদের ডাকেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাদের সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নেরি সিদ্ধান্ত সংসদ নেতার হাতে ছেড়ে দেন। গত সাত জানুয়ারির ভোটে ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩ আসন। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের বিপরীতে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনে বিষয়ে আওয়ামী লীগের জোটের বিষয়ে একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। হুইপ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, মহিলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেত্রীরা মনোনয়নের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব পাবেন।
আসন বণ্টনের নিয়ম
সংরক্ষিত আসনগুলো কোন প্রক্রিয়ায় বণ্টন হবে তা আইনে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দেয়া আছে। সাধারণভাবে প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে।
আসন বণ্টনের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত আসনের মোট সংখ্যাকে (বর্তমানে ৫০টি) সংসদের সাধারণ আসনের মোট সংখ্যা (৩০০টি) দ্বারা ভাগ করার পর ভাগফল হিসাবে প্রাপ্ত সংখ্যা (১.৬৬৭) দিয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বা জোটের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মোট আসন সংখ্যাকে গুণ করে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে সেই সংখ্যাই হবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল বা জোটের অনুকূলে বণ্টনতব্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা।
অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের ২২৩টি আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত আসন হবে– ৫০x৩০০=০.১৬৬৭। এরপর ২২৩x০.১৬৬৭=৩৭.১৬৬৭। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ৩৭টি আসন পাবে।
আইন অনুযায়ী ভগ্নাংশ শূন্য দশমিক পাঁচ (০.৫) বা তার বেশি হলে ভগ্নাংশকে পূর্ণ এক সংখ্যা গণনা করতে হবে এবং শূন্য দশমিক পাঁচ (০.৫) অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর হলে ওই ভগ্নাংশকে শূন্য সংখ্যা গণনা করতে হবে।
আইনে আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের পর বণ্টন করা আসনগুলোর যোগফল ৫০ (সংরক্ষিত মোট আসন) এর চেয়ে বেশি হলে অতিরিক্ত আসন বা আসনগুলো নির্ধারিত পদ্ধতিতে কাটা হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আসনের সংখ্যা একটি হলে, যেসব দল বা জোট আনুপাতিক হারের ভগ্নাংশকে পূর্ণ সংখ্যা গণনা করার কারণে কোনো আসন পেয়েছে, সেসব দল বা জোটের মধ্যে ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশের অধিকারীর অনুকূলে বরাদ্দ করা আসন থেকে ওই অতিরিক্ত আসনটি কাটতে হবে। তবে ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশের অধিকারী দল বা জোটের সংখ্যা একাধিক হলে কার আসন কাটা যাবে, তা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। অতিরিক্ত আসন সংখ্যা একাধিক হলে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের পর বণ্টন করা আসনসমূহের যোগফল ৫০-এর কম হলে এবং অবশিষ্ট আসনের সংখ্যা একটি হলে তা যে রাজনৈতিক দল বা জোটের অনুকূলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সংরক্ষিত মহিলা আসন বণ্টন করা হয়েছে তাদের অনুকূলে বণ্টন হবে।
আইনে আসন বণ্টনে ভগ্নাংশকে পূর্ণ সংখ্যা গণনার বিষয়ে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
আইনের এই বিধান অনুসারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পাবে–১১x০.১৬৬৭= ১.৮৩৪টি, অর্থাৎ দুটি আসন। এককভাবে জোটবদ্ধ হলে স্বতন্ত্রদের সংরক্ষিত আসন হবে ৬২x ০.১৬৬৭ =১০.৩৩৪টি, অর্থাৎ ১০টি আসন। আর ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে এলে পাবে ৩x০.১৬৬৭=০.৫০টি, অর্থাৎ একটি আসন।
তবে স্বতন্ত্ররা এককভাবে জোটবদ্ধ না হলে খণ্ড খণ্ডভাবে জোট করলে এই হিসাব বদলে যাবে। তারা পাঁচ বা ছয় জন করে খণ্ড খণ্ড জোট হলে ১১টি আসন পাবে। একই প্রক্রিয়ায় ১১ জন করে জোট করলে পাঁচটি জোটের অনুকূলে ১০টি সংরক্ষিত আসনে ও বাকি সাত জনের অনুকূলে আরও একটি সংরক্ষিত আসন পাবেন। ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্ররা ৪/৫/৬ জন করে জোট করে একটি করে আসন দাবি করলেও আইনে বাধা থাকবে না। এক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা নির্ধারিত ৫০টি ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি হস্তক্ষেপ করতে হবে। কিংবা বরাদ্দ সংরক্ষিত আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে।
সুত্র: উত্তরণবার্তা