শাহিনা আতরওয়ালা। ছোটবেলায় মুম্বাইয়ের বান্দ্রা রেলস্টেশনের কাছে একটি ঘিঞ্জি এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে।
রাস্তাঘাটে রংবেরঙের চুড়ি বিক্রি করে আয় করতেন শাহিনার বাবা। একসময় তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিয়মিত চুড়ি বিক্রিও করতে যেতে পারতেন না। মেয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল বলে কষ্ট করে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন।
কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল শাহিনার। মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে তার বাবা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে মাঝপথে কম্পিউটার শেখা বন্ধ হয়ে যায় শাহিনার। মাথার উপর থেকে ছাদও সরে যায় শাহিনাদের। ছোট ঘর ছেড়ে ফুটপাথে গিয়ে সংসার গড়ে তোলেন তারা। তবুও হার মানেননি শাহিনা। স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার শিখবেন বলে টাকা বাঁচাতে শুরু করেন তিনি।
প্রতিদিন এক বেলা খাবার খেতেন না শাহিনা। খাবারের টাকা সঞ্চয় করতেন তিনি। এমনকি, স্কুলে যাতায়াতের জন্য বাস ছেড়ে হেঁটে যেতেন তিনি। বাস এবং খাওয়া দাওয়ার খরচ বাঁচিয়ে আবার কম্পিউটার শেখার জন্য ভর্তি হন শাহিনা।
শাহিনা কম্পিউটারে দক্ষ হয়েছেন দেখে তার বাবা সঞ্চিত অর্থ খরচ করে মেয়ের জন্য একটি পুরোনো কম্পিউটার কেনেন। বন্ধুবান্ধবদের থেকে ধারও নেন। বাড়িতে বসেই কম্পিউটারে কাজ করতে শুরু করেন শাহিনা।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বাইয়ের একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে বিকম ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। তারপর এনআইআইটিতে ভর্তি হন শাহিনা। ভিজুয়াল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডিজাইন নিয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি।
একাধিক নামী সংস্থার তরফে চাকরির প্রস্তাব পান শাহিনা। শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফ্টে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বর্তমানে এই সংস্থায় প্রধান ইউএক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
২০২১ সালে মুম্বাইয়ে নিজের ফ্ল্যাট কেনেন শাহিনা। সামাজিক মাধ্যমে নিজের জীবনের খুঁটিনাটি প্রায়ই পোস্ট করেন তিনি। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছিলেন, ফুটপাথের জীবন বড়ই কঠিন। আমাকে লিঙ্গবৈষম্য থেকে যৌন হেনস্থার শিকার পর্যন্ত হতে হয়েছে। কিন্তু আমি হার মানিনি। আমি শুধু ভাবতাম, নিজের জন্য অন্য জীবন তৈরি করতে হবে।
ডিজাইনিং নিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মুম্বাইয়ের একটি কার এক্সপোয় অংশগ্রহণ করেন শাহিনা। বেঙ্গালুরুতে জুমকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় সেখানে একটি স্কুটারের কাঠামো তৈরি করে দেখান তিনি। তার পর রাতারাতি পরিচিতি তৈরি হয়ে যায় তার।
একাধিক জনপ্রিয় সংস্থা থেকে ডিজাইনিংয়ের জন্য শাহিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিথি হয়ে পড়ুয়াদের ডিজাইনিং নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।
অর্থাভাবের কারণে যে কিশোরীরা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, তাদের দায়িত্ব নিয়ে একটি সংস্থা খুলেছেন শাহিনা। তিনি যে পথে একা লড়াই করে এগিয়ে গিয়েছেন, অন্য মেয়েরাও যেন সেই পথে হেঁটে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শাহিনা।
এককালে যার ঠিকানা ছিল ফুটপাত। চোখে স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার। ছোটবেলার সেই শহরে এখনও থাকেন তিনি। তবে নিজের কঠোর পরিশ্রমে বদলেছেন ঠিকানা। আগে যে শহরের ফুটপাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন বুনতেন, এখন সেই শহরের একটি বহুতল ভবনে থাকেন তিনি। যার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলে খোলা আকাশ দেখা যায়।