মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান দাতুক হুসেইন ওমর খান।
জানা গেছে, রাজধানী কুয়ালালামপুরের অদূরে সেলাঙ্গরের ক্লাংয়ের আশেপাশে একটি বাড়িতে আটকে রেখে ওই সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছয়জন অহরণকারীকে গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশি সাংবাদিককে উদ্ধার করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপহরণের শিকার ওই বাংলাদেশি সাংবাদিক বলেন, নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি ছিল, হয়ত অল্প সময়ের মধ্যে মারা যেতাম। অহরণকারীরা পেটে ঘুষি মেয়ে ও আমার হাতের কিছু অংশ কেটে দেয়। তারপর বলে, তাদেরকে ১.৯ মিলিয়ন রিঙ্গিত দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে।
তিনি বলেন, গত ৭ নভেম্বর পুত্রজায়াতে আমার বাসায় এসে তিনজন নিজেদের এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির সদস্য বলে দাবি করেন। তারা বলেন— একটি মামলা আছে, সেই বিষয়ে তদন্তে সহায়তা করার জন্য অফিসে যেতে হবে। এরপর আমাকে শাহ আলমের একটি জায়গায় নিয়ে যায়। পরে আরও কয়েকজন লোকের সঙ্গে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে উঠিয়ে একটি বনাঞ্চলে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময় গাড়িতে ঘোরাঘুরি করে তারা সেলাঙ্গরের ক্লাংয়ের আশপাশের একটি বাড়িতে আমাকে নিয়ে যায়। সেখানে একটি ভিডিও দেখিয়ে বলে, এই লোকেদের জবাই করা হবে। যদি দাবি পূরণ না হয় তাহলে আমারও একই অবস্থা হবে বলে হুমকি দেয়। তারা আমার বাম হাতে কিছুটা কেটে দেওয়ার পর আমি তাদের অনলাইনের মাধ্যমে ৫০ হাজার রিঙ্গিতের বেশি অর্থ দিই।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, অপহরণের তৃতীয় দিনে তাদের (অপহরণকারী) মধ্যে একজন মালয়েশিয়ান নাগরিককে বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। ওই ব্যক্তিকে তিনি বলেন— তুমি একটি অপরাধ সিন্ডিকেটের বলির পাঁঠা হচ্ছ। হয়ত মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের শোষণকারী একটি অপরাধী সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশের পর তোমরা আমার সঙ্গে এমন করছ।
তিনি জানান, পরে অপহরণকারী ওই ব্যক্তি আসল ঘটনা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা শুনে ক্লাংয়ের একটি ব্যাংকের কাছে তাকে নিয়ে যান। তখন গোমবাক জেলা পুলিশ সদর দপ্তরের (আইপিডি) কাছে রিপোর্ট করলে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে, সেলাঙ্গর পুলিশ প্রধান দাতুক হোসেন ওমর খান নিশ্চিত করেছেন, ঘটনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় তিন বেসামরিক নাগরিককেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া, আরও তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম তিনজনকে মালয়েশিয়ার দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারা এবং অন্য তিনজনকে ৩৪২ ধারা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের দুই দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়।