যুদ্ধ-বিপ্লব এবং নৈরাজ্য শিল্প-সাহিত্যে যতটা নান্দনিক বাস্তবে তা ততটাই ধ্বংসাত্মক। যদিও তা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের হাতিয়ারও।
বাস্তিল কারাগার ভাঙা থেকে ফরাসি বিপ্লবের রক্তাক্ত অধ্যায় এবং এ অঞ্চলের দেশভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সমগ্র পথটাই রক্তপাত, বেদনা ও অর্জনের। ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি, সূর্যসেন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সকলেই সেই ঐতিহাসিক সময়গুলোকে বয়ে আনা সন্তান। যদিও শুধু স্বার্থের জন্য এসব ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর সাথে ষড়যন্ত্রের গর্ভে জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা কিছু ব্যক্তিরও তুলনা চলে ! এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হিসেবে, স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের নাম আসে।
নিজে একজন স্বৈরশাসক হলেও গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারকে মিলিয়ে বেশ রুপসজ্জা সমেত আওয়াজ দিয়েছিলেন। স্বৈরশাসক হিসেবে ক্ষমতায় থেকে দল গঠন এবং রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু লেজ তুললে যেমন বোঝা যায় গৃহপালিত পশুটি বলদ না গাভীন, এদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মুখে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কথা বললেও এরা পূর্বাপরই জনবিছিন্ন থেকেছে। প্রহসন ও প্রবঞ্চনায় বরাবরই জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে ২০২৩ এর ২৮ অক্টোবর আবারো বিএনপি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সংবাদে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাংচুর করেছে। এদের বাঁধা দেয়ায় পুলিশকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। এদের আক্রমণে ১জন পুলিশ সদস্য নিহত ও ৪১জন আহত হয়েছেন। এরা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালসহ ২টি পুলিশ এ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছে। এছাড়া ১টি পুলিশ ভ্যান ভাংচুরসহ পুলিশ হাসপাতালের ৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।
সংবাদকর্মীরাও এদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। ০৯ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সাধারণ জনগণের উপর চড়াও হয়ে এরা ১২ টি বাস, ১৫টি মোটরসাইকেল ও ১টি পিকআপে আগুন দিয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সব সময় বিরোধীদের প্রতি সহনশীল থেকে যুক্তি উপস্থাপন ও জনগণকে সাথে নিয়ে জিততে হয়। কিন্তু বিএনপি তা কোনকালেই পারেনি। উল্টো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩০ নেতাকর্মীকে বেদমভাবে আহত করেছে। ৪ জন নারীকর্মীকে হেনস্থা করেছে। বিএনপিকে যারা তার ঐতিহ্যগত অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিতে চায় বা চাওয়ায় জন্য লবিং করেন-করছেন, এদের কাছে বিএনপির হত্যা কিংবা নৈরাজ্য মূলক আন্দোলনের ব্যাখ্যা কি ? সেই সাথে তাদের প্রাপ্তিযোগ-ই বা কি হল, সেটাও জানা জরুরি।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, ২০২৩ সালের ০৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভায় বলেছিলেন, আগামী ১০০ বছরেও আ.লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এরপর ১৬ জুন ২০২৩ সিরাজগঞ্জের সভায় বলেন, আগামী ৩০০ বছর আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না আ.লীগ। এই যে ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে বহু ক্রোশ দূরে নেবার চিন্তা তা কি আবারো কোন ২১ আগস্টের মত গ্রেনেড হামলা, কিংবা ১৫ আগস্টের মত নির্বংশ পরিকল্পনার অংশবিশেষ ? বিষয়গুলোর বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ এবং জবাবদিহিতা জরুরি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বাইরে যে কয়টি পক্ষ এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় এসেছে এদের প্রত্যেকেই স্বৈরশাসকদের ব্রেইন চাইল্ড বা ব্রন চাইল্ড। এজন্যই রুমিন ফারহানার ৩০০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় না আসা, এই বক্তব্যের গভীরতা কি নাকি এটা তাদের ঈদের পর আন্দোলনের মত ফাঁপরবাজি সেটাও জানা জরুরি।
বিএনপির চেয়ারপারসন এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির দায়ে জেলে, ভাইস চেয়ারম্যান হত্যামামলাসহ পলাতক, দেশে থাকা নেতারাও বিভ্রান্ত। ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের মত ফাইনাল খেলার কথা বলে ২৯ অক্টোবর আবারো হরতালের মত সেমিফাইনাল খেলতে চাওয়ায় রাজনৈতিকভাবে বিএনপির আবারো পরাজয় ঘটেছে। নিরীক্ষা দৃষ্টিতে এরা রাজনৈতিকভাবে এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, এদের নিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘তারিখের পর তারিখ, বিএনপির বাতিক,’। কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়ে বলছে, ডিম আগে না মুরগি আগে, এই বিতর্কেরও অবসান সম্ভব। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন আর সম্ভব নয়। যার প্রমাণ, কিছুদিন আগেও এরা অনশন, আন্দোলনের ডাক দিলেও এদের নেতা-কর্মীদের রুটি-কলার দোকানে ভিড় করতে দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাঠ ও ভোট-ই শেষ কথা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে। কিন্তু এনিয়েও রুমিন ফারহানাসহ তার দলের লোকেরা যেভাবে বিদেশিদের অভিযোগ করে আসছে তাতে মনে হয় তারা ওয়াকওভার প্রত্যাশা করে। কিন্তু গণতন্ত্র মানে তো ওয়াকওভার কিংবা আঁতাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আশা নয়। এখানে মাঠ ও ভোট, দুইস্থানেই সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রমাণ দিতে হয়।
জনমানুষের দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় দূর্বার। ক্ষমতাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন দর্শন ও মমতা দিয়ে তা আরো পোক্ত করে তুলেছে। কাজেই আওয়ামী লীগে ভোট দেবার অপরাধে গফরগাঁওয়ের কামরুজ্জামানের দশটি হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলা কিংবা পূর্ণিমাসহ নারীদের ধর্ষণের ঘটনা দিয়েও যেখানে আওয়ামী লীগকে দাবায়া রাখা যায়নি সেখানে আজ তা আরো অসম্ভব। বিষয়গুলো আওয়ামী বিরোধী শিবিরগুলোর বুঝে গেছে। এজন্যই এত আঁতাত, এত হাঁসের ডিম অনুসন্ধান।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি সুদ মহারাজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার কর্মী ও একসময়ের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিদুল রহমানের ‘অধিকার’, যুদ্ধাপরাধী কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ‘বেলা’ দিয়েও আওয়ামী লীগকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ফ্রন্ট খুলেছেন। যা লেজ তোলার মধ্য দিয়ে জনগণ বুঝে নিয়েছে। কাজেই আল্টিমেটাম, আঁতাত এবং ঘরে-বাইরের লোক দেখানো আন্দোলন, নৈরাজ্য দিয়ে জনগণের ক্ষতি না করে জনবান্ধব রাজনীতির চর্চা আবশ্যক। এক্ষেত্রে তারা ঐতিহাসিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান হিসেবে শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করতে পারেন।
হায়দার মোহাম্মদ জিতু
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও রাজনৈতিক কর্মী