বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি। জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চেভেলের তথ্যচিত্র উদ্দেশ্যমূলক।
সোমবার গাজীপুর সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠান শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন। তিনি এ প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানান। জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব দিয়ে জাতিসংঘ পরিমন্ডলে বাংলাদেশ যেভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে, সেভাবে কাজ করে সব ষড়যন্ত্রের সঠিক জবাব দেয়া হবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা পাঠানো নিয়ে ডয়চেভেলে তথ্যচিত্র প্রচার করেছে সম্প্রতি। সেখানে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এরপর এ নিয়ে একটি প্রতিবাদলিপি দিয়েছে সেনা সদর। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের মাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে সেনা সদর বলেছে, ডয়চেভেলের তথ্যচিত্রটি পক্ষপাতমূলক ও একপেশে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তিরক্ষা অপারেশনের প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সব প্রতিষ্ঠানসমূহের আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়া-প্যাসিফিক পিস অপারেশন ট্রেনিং সেন্টার (এএপিটিসি) এর ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভা এবং ওয়ার্কশপের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঝুঁকির কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা পরিবেশ অত্যন্ত জটিল হয়ে ওঠেছে। এই পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির গতি প্রকৃতি মূল্যায়ন ও তা মোকাবিলায় ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের রূপরেখা প্রণয়ন ছিল এবারের এএপিটিসির বার্ষিক সাধারণ সভার মূল উদ্দেশ্য।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ তথা বিপসট এ প্রথম বারের মতো এএপিটিসির বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন নিঃসন্দেহে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ত্যাগ, অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের এক অনন্য স্বীকৃতি। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক ও সামরিক উভয় অঙ্গনে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শান্তি কেন্দ্রিক উন্নয়নের যে মডেল জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে উপস্থাপন করেছিলেন তা আজকের সংকটময় নিরাপত্তা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অনুকরণীয় পেশাদারিত্ব ও সফলতার চিত্র তুলে ধরেন এবং শান্তিরক্ষীদের উঁচুমানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণে বিপসটের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতার উপরে গুরুত্বারোপ করেন।
এএপিটিসি শান্তিরক্ষী অপারেশন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সঙ্গে জড়িত নীতিনির্ধারক, গবেষক, শান্তিরক্ষী, প্রশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি অনন্য প্লাটফরম। এএপিটিসিতে বর্তমানে ২৪টি সদস্য রাষ্ট্র ও দুইটি পর্যবেক্ষক দেশ রয়েছে। গত ২০২৩ সালের বার্ষিক সম্মেলনে বিপসটের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ এক বছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থার সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ডিফেন্স-মিলিটারি অ্যাটাশেগণ, ঊর্ধ্বতন সামরিক, আধা-সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধি, এএপিটিসির সদস্যভুক্ত ২৬টি দেশের প্রায় ৫০ জন বিদেশি প্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সুত্র: উত্তরণবার্তা