জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বাসে আগুন দেয়ার জন্য বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই বোমা বানাচ্ছে বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা শাখা।
কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে, রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে বাসে আগুন দেওয়ার সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করেছে র্যাব।
সোমবার সকালে, রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। যাত্রী সেজে বাসের পেছনের দিকে বসে ছিলো তারা। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে বাসটিতে আগুন দেয় তারা। চালক বিষয়টি টের পেলে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেয় দুবৃত্তরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সাদা পোশাকে থাকা র্যাব সদস্যদের হাতে তারা ধরা পড়ে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বাসে আগুন দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়া ব্যক্তি হলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মজুমদার। তিনি ও তার সংগঠনের নেতারা যাত্রী সেজে বাসে আগুন দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন।
আবদুল্লাহপুর থেকে মিরপুরগামী প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে যাত্রী সেজে ওঠেন তারা। তখন বাসে চালক ছিলেন আর চালকের সহকারী বাইরে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন। এ সময় ওই দুজন বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পাশে থাকা র্যাব সদস্য তাদের একজনকে ধরে ফেলে।
এদিকে, ২৮ অক্টোবরের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান তারেকুল ইসলাম ভুইয়াকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের একটি দল। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ছবি ও ফুটেজ পর্যালোচনা করে গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের উপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তোপখানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার দুপুরে, রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সঙ্গে আলাপের সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রাজধানীর পল্টন এলাকায় বিএনপির ডাকা সমাবেশে ভাড়া করা লোকজন নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জনতার অধিকার পার্টির (পিআরপি) চেয়ারম্যান তারেকুল ইসলাম ভূইয়া (৩৫)।
তিনি বলেন, রাজধানীর পল্টনে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে চালানো হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় ডিএমপির শাহজাহানপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তদন্তে বিভিন্ন এলাকার ছবি ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুনে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়ার সঙ্গে জড়িত তারেকুল।
তারেকুল ইসলাম ২০১৪ সালে ফেনী সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে, ২০১৮ সালে ফেনী-১ সংসদ সদস্য নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে, ২০২০ সালে এনডিএম থেকে ফেনী পৌরসভার মেয়র পদে, ২০২৩ সালে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
দেড়’শ টাকা করে ভাড়া করা লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। হামলার আগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে তাদের পূর্বপরিকল্পিত নানা রকম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তারা। যার মধ্যে রয়েছে পুলিশ হত্যা, পুলিশের উপর আক্রমণ, দায়িত্বরত সাংবাদিকদের আক্রমণ, প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা, জর্জ কোয়ার্টারসহ পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন, হাসপাতালে আগুন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পরিবহন ভাঙচুর ও আগুনের মতো ঘটনা রয়েছে।
গোয়েন্দা প্রধান আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের সিসিটিভি ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রেফতার তারেকুলের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমন কী হাতে লাঠি ও ইট পাটকেল নিয়ে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
কথিত একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান পরিচয় দেয়া তারেকুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সঙ্গে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পল্টনের আশপাশেন বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয়।
এছাড়া উত্তর শাহজাহানপুর উত্তরা ব্যাংকের সামনে বিআরটিসি বাসে চলককে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে আগুন দেয়। চলমান নাশকতায় জড়িত অন্যান্য পৃষ্ঠপোষক ও অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন ডিবি প্রধান।