‘‘রাশিয়ার গুগল’’ খ্যাত ডাচ মালিকানাধীন বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি ইয়ানডেক্সের মালিকানা হাতবদল হয়েছে।
এটি সাড়ে ৪৭ হাজার কোটি রুবল বা পাঁচ হাজার দুইশ কোটি ডলারে রাশিয়ায় বিক্রি করা হয়েছে।
অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠানটির রাশিয়া অংশের ব্যবসা এখন সম্পূর্ণ রুশ মালিকানাধীন। এর আগে, এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাশিয়ার জনসাধারণের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধের তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছিল।
এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে মস্কো। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, “১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিস্তৃত পরিকল্পনা ও আলোচনার ফলাফল এটি।”
রাশিয়ান পার্লামেন্ট কমিটির তথ্য নীতিবিষয়ক উপ-প্রধান অ্যান্তন গোরেলকিন বলেন, “কয়েক বছর আগে ইয়ানডেক্স যখন পশ্চিমা আইটি জায়ান্টদের দখলে চলে যাওয়ার হুমকির মধ্যে ছিল তখন আমরা এ লক্ষ্যই অর্জন করতে চেয়েছি।”
তিনি বলেন, “রাশিয়ার কাছে ইয়ানডেক্স আর ১০টি সাধারণ প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। গোটা রুশ সমাজের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।”
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে “ডটকম বুম” নামে নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন, ম্যাপিং ও বিজ্ঞাপন ব্যবসা শুরু করে ইয়ানডেক্স। আর কোম্পানির অন্যান্য পরিষেবার মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ও খাবার ডেলিভারি সেবা।
৫,২০০ কোটি ডলারের চুক্তিটি ইয়ানডেক্সের বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম বলে জানিয়েছে বিবিসি।
২০২১ সালে এ প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩,০০০ কোটি ডলার।
প্রতিষ্ঠানটি ‘‘রাশিয়ার গুগল’’ নামে পরিচিতি পেলেও মার্কিন সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল বা এর মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের সঙ্গে সম্পর্ক নেই ইয়ানডেক্সের।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর থেকে অনেক বিদেশি মালিকানাধীন ব্যবসা রাশিয়া ছেড়েছে। সে সময় বাজারমূল্যের চেয়েও খুব কম দামে নিজ সম্পদ বিক্রি করতেও বাধ্য হয়েছে অনেক কোম্পানি।
বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিদের দামের ক্ষেত্রে ক্রেমলিন ৫০% ছাড় দিতে বলে। ফলে ইয়ানডেক্স মূলত রাশিয়ার বাজারের চাহিদা পূরণ করলেও এই শর্ত তাদের ওপরও বর্তায়।
এছাড়াও, ফরাসি খাদ্যপণ্য প্রতিষ্ঠান ‘‘ড্যানোন’’ ও অ্যালকোহল উৎপাদক ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান ‘‘কার্লসবার্গ’’-এর পাশাপাশি অন্যান্য পশ্চিমা কোম্পানির সম্পদও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
২০২২ সালে ইয়ানডেস্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরকাদি ভোলোজও নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে সরে আসেন। রাশিয়া সংশ্লিষ্ট যেসব শীর্ষ ব্যবসায়ীরা ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি।
২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন ভোলোজ। সে সময় এর কারণ হিসেবে ইউনিয়ন বলেছিল, “সার্চ ফলাফলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার ভুল ব্যাখ্যা প্রচার ও ক্রেমলিনের সমালোচনামূলক যেমন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন সম্পর্কিত কন্টেন্ট অপসারণের জন্যও দায়ী ইয়ানডেক্স।”
ইয়ানডেক্স সবসময় নিজেদের রাশিয়ার প্রভাবমুক্ত বলে দাবি করে এলেও ২০২২ সালে ‘‘বিবিসি মনিটরিংয়ের’’ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ইউক্রেইনের বুচা শহরে রাশিয়ার নৃশংসতার খবর প্রকাশ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
ইয়ানডেক্সের ব্যবস্থাপকেরা কর্মীদের কাছে এক চিঠিতে বলেন, কোম্পানিটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কোম্পানির প্রস্তাবিত নতুন মালিক হবে কনসোর্টিয়াম ডটফার্স্ট। ইয়ানডেক্সের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপকেরা এর সঙ্গে আছেন। এর পাশাপাশি বড় তেল কোম্পানি লুকঅয়েল নিয়ন্ত্রিত একটি তহবিল এবং ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার চাচাভা, পাভেল প্রাস ও আলেকজান্ডার রিয়াজানভের মালিকানাধীন আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান এর যৌথ মালিকানা অংশীদার হবে।
ইয়ানডেক্সের ওপর নতুন মালিকদের প্রভাব কতটা থাকবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।